Header Ads

Bangla choto golpo



 পানু মিয়া  



জ্বর আসার কথা পানুর কিন্তু হলো পুরো উল্টো। নাঈমা জ্বরে প্রায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলার মতো অবস্থা। ডাক্তার দিনে দুবার তাকে বাড়িতে এসে দেখে যাচ্ছে। ডাক্তারের ব্যাবস্থা পানুই করেছে। ডাক্তার ছেলেটি তার স্কুল জীবনের বন্ধু। সদ্য পাশ করে বেরিয়েছে। এখন নিয়মিত রোগীও দেখছে। বন্ধুর অনুরোধ উপেক্ষা করতে না পেরে দিনে দুবেলা প্রায় অনিচ্ছা সত্ত্বেই নাঈমাদের বাড়িয়ে গিয়ে বিরস মুখে বসে থেকে চলে আসছে। এর মাঝে তাকে নাস্তা দিতে আসে নূরী। নাঈমার ছোটবন। সে আড়চোখে কেমন করে যেনো তার দিকে তাকায়। ব্যাপারটা লক্ষ করেছে ইরান। প্রথম যেদিন নাঈমা কে দেখতে এসেছিল। সেদিন তার নাম ইরান বলাতে নূরী মেয়েটি মুখ চেপে ধরে। হাসির কি আছে! মানুষের নাম ইরান হতে পারে না। ইরাক, সিরিয়া, বসনিয়া সব হতে পারে। সৌদি হলেও অসুবিধা কি।

ইরান হাসপাতালে আসার আগেই পানু গিয়ে হাসপাতালের গেটে দাড়িয়ে থাকে। তারপর বন্ধু আসলে হাসি হাসি মুখে এগিয়ে গিয়ে বুক পকেট থেকে একটি বেনসন সিগারেট বের করে এগিয়ে দেয়। আপাতত এটাই তার রোগী দেখার ফি। গত তিনদিন ধরে এই অবস্থা চলছে।

নাঈমার মা ইসমত আরা বেগম খুব খুশি। তার ধারণা নাঈমার বন্ধু বিরাট ধনি। ডাক্তার তার কথায় ওঠ বস করে। তিনি মেয়েকে একবার জিজ্ঞেস করেছে, হ্যাঁ রে নিমু ছেলে তো বিরাট ধনী। নাঈমা উত্তর দেয়নি চুপ করে থেকেছে। উত্তর দেবার মতো অবস্থা পানুর নেই। পুরোটা না জানলেও আন্দাজ করতে পারে সে। একজন মানুষকে ভালোবাসবে কিন্তুু তাকে বুঝবে না, তা কি করে হয়। সেদিন বৃষ্টি থামলে তারা অনেকটা সময় পাশাপাশি কাটিয়েছিল। কি সুন্দর করে কবিতা আবৃত্তি করে পানু।




"মাঝে মাঝে দুর আকাশের নক্ষত্র গুলোকে খুব আপন হয়। মনে হয় সহস্র বছর আগের আমি সেখানে ছিলাম। উতপ্ত লাভায় ডুবে আমি কি যেন খুজেছি। মনে হয় ওখানের কোন ধুলি ঝড়ের বাতাস হয়েই ছিলাম অনেক আগেই। তারি মাঝে হারিয়ে যাওয়া কোন চোখে কি যেন খুজেছি সহস্র কাল আগেই..."

বাড়ি ফিরে আয়নার সামনে দাড়াতেই কেপেঁ ওঠে নাঈমা। কথায় কথায় পানুর গায়ে হাত পড়েছিল বোধহয়। খুব আপনজনের গায়ে আপনা থেকেই হাত চলে যায়। হাতে ভেজা পাঞ্জাবির রং লেগে আছে খেয়াল করেনি একবারও! ভীষণ লজ্জা পায় সে। আনন্দে হাতটাই কেটে ফেলতে ইচ্ছে হয় তার।
নাঈমা মনে মনে ঠিক করে ফেলে, টাকা জমিয়ে দামী একটা পাঞ্জাবি সে পানুকে কিনে দিবে। তাহলে রং উঠবে না। রং ওঠাও তো খারাপ না...!
গেটে আওয়াজ পড়ছে, সম্ভবত ডাক্তার এসেছে। নূরী প্রানপণে দরজার দিকে ছুটছে....

No comments